ক্ষতিকর রেডিয়েশন নির্গতের শীর্ষে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন

স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ থেকে নির্গত হাই ফ্রিকোয়েন্সির ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের কারণে দৃষ্টিশক্তি হারানো, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছেন।

সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়, যেসব মোবাইল ফোন থেকে সবচেয়ে বেশি রেডিয়েশন নির্গত হয়; সেসব ফোনের তালিকায় সর্বোচ্চ রেডিয়েশন নির্গতে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের স্মার্টফোন।

প্রত্যেকেই একদম হাতের নাগালেই স্মার্টফোন রাখেন। প্রতি মুহূর্তে যাতে যোগাযোগ অব্যাহত থাকে সেই চিন্তা থেকেই এ কাজ করেন। কিন্তু মোবাইল ফোন কাছে রাখাটাই অত্যন্ত ক্ষতির কারণ হতে পারে। মোবাইল থেকে নির্গত ক্ষতিকর তরঙ্গের প্রভাবে ক্যান্সার ঝুঁকি, দৃষ্টিশক্তি হারানোসহ শরীরের অন্য কোষকলা ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে।

জার্মানির ওয়েবসাইট ইনসাইডহ্যান্ডি’কে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ স্টেফান উইনোপ্যাল বলেন, হুয়াওয়ের পি১০ ফোন থেকে প্রতি কিলোগ্রামে ০.৯৬ ওয়াট ও অ্যাপলের আইফোন-৭ থেকে ১.৩৮ ওয়াট রেডিয়েশন নির্গত হয়।

জার্মানির প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইটইনসাইডহ্যান্ডি’কে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ স্টেফান উইনোপ্যাল বলেন, যারা ফোনে প্রচুর পরিমাণে কথা বলেন, তাদের ফোন থেকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ নির্গতের পরিমাণ বেশি।

মোবাইল ফোনের ভয়েস বা ডাটা আদান-প্রদানের জন্য উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডের ব্যবহার হয়। ফোনে যখন কথা বলা হয়, তখন এই ফিল্ড থেকে কিছু শক্তি মানুষের মস্তিষ্কে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে জার্মানির বিকিরণ সুরক্ষা ফেডারেল অফিসের ওয়েবসাইটে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

উইনোপ্যাল বলেন, ‘বিকিরণ মূলত মোবাইল ফোন এবং মোবাইল টাওয়ারের মধ্যে সংকেত পাঠানোর সময় উৎপন্ন হয়।’ তবে একটি মোবাইল ফোন থেকে ঠিক কত পরিমাণে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ উৎপন্ন হয় তার একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড রয়েছে। টাওয়ারের বিকিরণ ও মোবাইল ফোনের সেই বিকিরণ গ্রহণের মাত্রার (স্পেসিফিক অ্যাবজর্পশন রেট বা এসএআর) ওপর নির্ভর করে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি। আর এটি পরিমাপ করা হয় প্রতি কিলোগ্রাম-ওয়াটে।

উইনোপ্যাল বলেন, এসএআর শেষ পর্যন্ত উষ্ণতার ডিগ্রি নির্দেশ করে; যখন এই বিকিরণকে শোষণ করে টিস্যু। মোবাইল ফোনের বিকিরণ গ্রহণের মাত্রা প্রতি কিলোগ্রামে ২ ওয়াটের বেশি হতে পারবে না। রেডিয়েশন সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন নন-আইওনাইজিং রেডিয়েশন প্রটেকশন ১৯৯৮ সালে মোবাইল ফোনের সর্বোচ্চ বিকিরণ গ্রহণের এই সর্বোচ্চ মাত্রা নির্ধারণ করেছে।

উইনোপ্যাল বলেন, প্রতি কিলোগ্রামে শূন্য দশমিক ৮ ওয়াট রেডিয়েশনকে ভালো মাত্রা হিসেবে ধরা হয়। মোবাইল ফোন নির্মাতা জায়ান্ট কোম্পানি স্যামসাংয়ের স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৮ থেকে নির্গত রেডিয়েশনের মাত্রা সম্প্রতি পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, স্যামসাংয়ের এই ফোন থেকে প্রতি কিলোগ্রামে ০.৩৮ ওয়াট রেডিয়েশন নির্গত হয়।

তবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে রেডিয়েশন নির্গত হয় অ্যাপলের আইফোন-৭ ও চীনের স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের স্মার্ট ফোন থেকে। পরীক্ষায় হুয়াওয়ের পি১০ ফোন থেকে প্রতি কিলোগ্রামে ০.৯৬ ওয়াট ও অ্যাপলের আইফোন-৭ থেকে ১.৩৮ ওয়াট রেডিয়েশন নির্গত হয়।

মোবাইল ফোনের রেডিয়েশনের বিকিরণের মাত্রা নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন। চার বছর আগে ব্রিটিশ চক্ষু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, মুঠোফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।

সূত্রঃ ইত্তেফাক/ইউবি