আকিকার গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা জেনে রাখুন

জাকারিয়া হারুন : “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম। আমার নেয়ামত পূর্ণরূপে প্রদান করলাম এবং তোমাদের জন্য মনোনিত করলাম ইসলামকে জীবন ব্যবস্থা হিসেবে।” (সূরা: মায়েদা: ৩)

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। এ ধর্মে একজন মানুষের জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনন্য সুন্দর বিধান প্রদান করেছে। নবজাতক শিশু জন্ম গ্রহণ করার পর মা-বাবা বা তার অভিভাবকের উপর আকীকার বিধান ইসলামের সৌন্দর্যময় বিধান সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি বিধান।

আকীকার অর্থঃ ইসলামের পরিভাষায় সন্তান জন্ম গ্রহণ করার পর আল্লাহর শুকরিয়া ও আনন্দের বর্হিপ্রকাশ হিসাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যে পশু জবাই করা হয়, তাকে আকীকা বলা হয়। আকীকার হুকুমঃ অধিকাংশ আলেমের মতে সন্তানের আকীকা করা সুন্নাতে মুআক্কাদা। রাসূসুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার সন্তানের আকীকা করতে চায়, সে যেন উহা পালন করে”। (মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে আবু দাউদ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেন, প্রতিটি সন্তানই আকীকার বিনিময়ে আটক থাকে”। (মুসনাদে আহমাদ, সুনানে তিরমিজী)

আকীকার বিনিময়ে সন্তান আটক থাকার দ্বারা উদ্দেশ্যে হলো শাফাআত। অর্থাৎ আকীকা দেওয়া হয়নি, এমন শিশু সন্তান যদি মৃত্যুবরণ করে, তাহলে কিয়ামতের দিনে সে শিশুর শাফাআত থেকে তার মা-বাবা বঞ্চিত হবে। আর হাদীসে একথা প্রমাণিত আছে যে, মুসলমানদের যে সমস্ত শিশু বাচ্চা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বেই মৃত্যু বরণ করবে, তারা তাদের মুসলিম মা-বাবার জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে। নিচে আকিকার মাসয়ালা তুলে ধরে হলো।

আকিকা কে করবে : যিনি সন্তানের লালন-পালন কিংবা ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করছেন, তিনিই সন্তানের আকিকা আদায় করবেন। তাই প্রথমত, এই দায়িত্ব বাবার ওপর ন্যস্ত হয়। বাবার সামর্থ্য না থাকলে সে ক্ষেত্রে মা সামর্থ্যবান হলে তিনি অথবা তাঁদের পক্ষ থেকে দাদা-দাদি, নানা-নানি আকিকা আদায় করবেন। (আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ : ৩০/২৭৭) অনেকের ধারণা, আকিকার জন্তু নানার বাড়ি থেকে আসতে হয়, এ ধারণা সঠিক নয়।

আকিকার পশুর সংখ্যা, নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে একই ধরনের দুটি বকরি এবং মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নাত। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৬/৩৩৬)

হজরত উম্মে কুরজ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘ছেলের জন্য এক ধরনের দুটি বকরি এবং মেয়ের জন্য একটি বকরি আকিকা করবে।’ (আবু দাউদ : ২৮৩৪)

তবে ছেলের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করলেও মুস্তাহাব আদায় হয়ে যাবে। যদিও দুটি করা উত্তম। (রদ্দুল মুহতার : ৫/২১৩, আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ : ৩০/২৭৭)

আকিকার দিন : সাধারণত সন্তান ভূমিষ্ঠের সপ্তম দিন আকিকা করা উত্তম। তবে যদি কেউ কারণবশত সপ্তম দিন না করতে পারে, তবে পরবর্তী সময়ে যেকোনো দিন আদায় করতে পারবে। সপ্তম দিন মনে রাখার একটি সহজ পদ্ধতি হলো, সপ্তাহের যে দিনটিতে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে, যেমন শুক্রবার, পরবর্তী সপ্তাহে ঠিক এর আগের দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার আকিকা আদায় করলে তা সপ্তম দিনে পড়বে। (আবু দাউদ : ২৮৩৭)

আকিকার জন্তুর ধরন : যেসব জন্তু দিয়ে কোরবানি শুদ্ধ হয় না, সেসব জন্তু দিয়ে আকিকাও শুদ্ধ হয় না। তাই আকিকার ক্ষেত্রে জন্তুর বয়স ও ধরনের দিক থেকে কোরবানির জন্তুর গুণ পাওয়া যায়, এমন জন্তুই নির্বাচন করতে হবে। (সুনানে তিরমিযি : খ. ৪, পৃ. ১০১)

কোরবানির জন্তুর সঙ্গে আকিকা করা : কোরবানির জন্তুর সঙ্গে আকিকা করা বৈধ। একটি পশুতে তিন শরিক কোরবানি হলে সেখানে আরো দু-এক শরিক আকিকার জন্যও দেওয়া যেতে পারে। তদ্রুপ কোরবানির মতো একই পশুতে একাধিক ব্যক্তি শরিক হয়ে আকিকা আদায় করতে পারবে। (দুররুল হুক্কাম : ১/২৬৬) বড় পশু অর্থাৎ গরু, মহিষ, উট ইত্যাদিতে ছেলের জন্য এক শরিক আকিকা দিলেও তা আদায় হয়ে যাবে।

আকিকার পশু জবাইয়ের সময় : কোনো কোনো অঞ্চলে একটি কুপ্রথা রয়েছে, যে যখন নবজাতকের মাথায় ক্ষুর বসানো হবে, ঠিক সেই মুহূর্তে পশু জবাই করতে হবে এ ধারণা সঠিক নয়। মাথা মুন্ডানোর আগে-পরে যেকোনো সময় আকিকার পশু জবাই করা যাবে। হজরত আতা (রহ.)-এর এক বর্ণনা মতে, আকিকার পশু জবাই করার আগে মাথা মুন্ডিয়ে নেয়া উত্তম। (আল মুকাদ্দামাতুল মুমাহ্হাদাত : ১/৪৪৯)

আকিকার গোশতের হুকুম : এটি কোরবানির গোশতের মতোই। কাঁচা ও রান্না করা উভয়টিই বণ্টন করতে পারবে। সর্বস্তরের লোক তা খেতে পারবে। এমনকি নিজের মা-বাবা, নানা-নানি, ধনী-গরিব সবাই নিশ্চিন্তে আকিকার গোশত খেতে পারবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৬/৩৩৬)

মৃত বাচ্চার আকিকা : যেহেতু আকিকা করা হয় বালা-মুসিবত দূর করার জন্য, তাই মৃত বাচ্চার পক্ষ থেকে আকিকা করা সুন্নাত নয়। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৭/৫৩৬)

আকিকার গোশত মা-বাবা খেতে পারবেন : হ্যাঁ। আকিকার গোশত মা-বাবা খেতে পারবেন। অনেকে মনে করেন, আকিকার গোশত মা-বাবা খেতে প